প্রকাশিত: Sat, Dec 23, 2023 10:49 PM
আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 7:55 PM

[১]বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এক ডজনেরও বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পরাজয়ের শঙ্কা!

আসাদুজ্জামান সম্রাট: [২] আন্দোলনরত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বাচন বর্জনের পরেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পড়তে হচ্ছে কঠোর চ্যালেঞ্জে। নির্বাচনে এদের হারার সম্ভাবনাও রয়েছে। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না তারা। 

[৩] রাজধানী ঢাকার সব সবচেয়ে কাছের ঢাকা-১৯ আসনে কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বর্তমান ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাভারের আদি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ। ডা. এনামুর রহমান এই এলাকার বাসিন্দা না হওয়ায় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধের কারনে মুরাদ জংয়ের সঙ্গে পেরে ওঠা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

[৪] একই চিত্র ঢাকার সংলগ্ন গাজীপুর-২ আসনেও। এ আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি আলিম উদ্দিন বুদ্দিন। গাজীপুরের সাবেক মেয়র এবং গত নির্বাচনে মা’কে প্রার্থী করে জয়ী হওয়া জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যেই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আলিম উদ্দিনের পক্ষে সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এ আসনের হিসাব উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে এলাকাবাসী।

[৫] ঢাকার বাইরে সবচে’ বেশি নির্বাচনী আমেজ তৈরি হওয়া দক্ষিণের জেলা পিরোজপুর-১ আসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আউয়ালের ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী। নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতা-কর্মী তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে দু’পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

[৬] বরিশাল-৫ সদর আসনে সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ প্রার্থী হতে পারবেন কি-না তা নিশ্চিত নয়। তিনি প্রার্থী হলে এ আসন থেকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের জয়লাভ কঠিন হয়ে যাবে।

[৭] একই অবস্থা একই মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের। শরীয়তপুর-২ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলীর ছেলে ডা. খালেদ শওকত আলী। নির্বাচনী মাঠে ইতিমধ্যেই তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।

[৮] নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে প্রধান বাধা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোহরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু।

[৯] নেত্রকোনা-২ আসনে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আলী আশরাফ খান খসরুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এক সময়ে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক নির্বাচনী মাঠে ঝড় তুলেছেন।

[১০] লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা সিরাজুল হক। তার পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা নেমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মন্ত্রী।

[১১] রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক। নির্বাচনী মাঠে তাঁর জনপ্রিয়তায় খেই হারিয়ে ফেলেছেন শাহরিয়ার আলম।

[১২] মেহেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সব নেতা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

[১৩] জামালপুর-২ আসনে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনুজ্জামান। এ আসনে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও অন্য দু’জন শাহীনুজ্জামানকে সমর্থন জানিয়ে মাঠ থেকে উঠে গেছেন। ফলে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়েছেন তিনি। 

[১৪] ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার। এ আসনেও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

[১৫] নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন খালেকুজ্জামান। নির্বাচনী মাঠে দলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে তাঁর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব